শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ঘরে বসেই ফেসিয়াল

সুস্থ ও সুন্দর ত্বক মানেই পরিষ্কার ত্বক। আর যেনতেনভাবে তো ত্বক পরিষ্কার করা যায় না। মাসে একবার বিউটি পারলার বা স্যালনে গিয়ে ফেসিয়াল করলে ভালো। কিন্তু ব্যস্ততায় সেই সময় বা সুযোগ হয়ে ওঠে না। চাইলে ঘরে বসেই করতে পারেন ফেসিয়াল। ত্বকের ধরন বুঝে বাড়িতেই কীভাবে করবেন ?

তৈলাক্ত ত্বক
তৈলাক্ত ত্বক হলে প্রথমে তেল ও ক্ষারমুক্ত ফোমিং ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ সময় বৃত্তাকার গতিতে (সার্কুলার মোশনে) হাতের আঙুল দিয়ে মুখের এক জায়গা থেকে ম্যাসাজ শুরু করতে হবে। পুরো মুখ, গলা ক্লিনজার দিয়ে ম্যাসাজ শেষে আগের জায়গায় ফিরে আসতে হবে। এভাবে পাঁচ মিনিট করতে পারেন। তৈলাক্ত ত্বকে সাধারণত ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডসের সমস্যা বেশি থাকে। হালকা একটু স্টিম দিয়ে নিলে ব্ল্যাক হেডস তুলতে সহজ হয়। বাড়িতে স্টিম মেশিন না থাকলে কোনো বড় বাটিতে বা মগে গরম পানি নিয়ে মাথার চারপাশে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে গরম ভাপ নিতে পারেন। এতে লোমকূপ খুলে যাবে। ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস তোলার স্ট্রিপ ব্যবহার করে এটি তুলতে হবে। এরপর মুখ মুছে মুলতানি মাটি ও চন্দনগুঁড়ার প্যাক ভালোভাবে মুখ-গলায় ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। প্যাক শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নিন। এরপর তেলমুক্ত কোনো ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা থাকে, এ কারণে স্ক্রাব ব্যবহার না করাই ভালো। করতে চাইলে শুধু টি-জোনে, অর্থাৎ কপাল ও নাকে মৃদু স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন।

শুষ্ক ত্বক
ক্রিমযুক্ত মৃদু স্ক্রাব দিয়ে শুরুতে মুখটা আলতোভাবে পাঁচ মিনিট ম্যাসাজ করে নিতে হবে। এরপর তুলার সাহায্যে দুধযুক্ত ক্লিনজার দিয়ে আবার মুখ পরিষ্কার করে নিন। যদি ব্ল্যাক হেডসের সমস্যা থাকে, তাহলে হালকা স্টিম নিয়ে তা তুলে ফেলতে হবে। এরপর হাইড্রেটিং মাস্ক—যেমন মধু, দুধের সর, কলা দিয়ে একটা প্যাক—তৈরি করতে পারেন। ১০-১৫ মিনিট রেখে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এখন ভারী ধরনের কোনো ময়শ্চারাইজার আঙুলের ডগায় নিয়ে ভালোভাবে মুখে ব্যবহার করতে হবে।

মিশ্র ত্বক
এ ধরনের ত্বকে টি-জোন তৈলাক্ত থাকে। আর বাকি অংশ থাকে শুষ্ক। ব্রণ বা অ্যালার্জির সমস্যা না থাকলে টি-জোনে আলতোভাবে মৃদু স্ক্রাব ব্যবহার করতে পারেন। তবে স্ক্রাব ব্যবহারের আগে তেলমুক্ত ময়শ্চারাইজিং ক্লিনজার বা ফোমিং ফেসিয়াল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। সামান্য স্টিম নিয়ে ব্ল্যাক হেডস তুলে নিতে পারেন। এরপর গোলাপ ফুলের পাপড়ির পেস্ট, গোলাপজল, টক দই ও মধু দিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। প্যাক শুকিয়ে গেলে মুখ ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তেলমুক্ত ময়শ্চারাইজার এখন মুখে ব্যবহার করুন। এ ছাড়া সংবেদনশীল ত্বকে অনেক সময় ফেসিয়াল করলে ব্রণ ও র‌্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে ভালো কোনো ব্র্যান্ডের ফেসিয়াল ওয়াইপস দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন।

চোখে-নখে রঙের খেলা (Nail Color)

সাজের কোনো নিয়ম আছে, কে বলল শুনি? যদি থেকেও থাকে, ভেঙে দিতে ক্ষতি কী? খুব ভারী মেকআপ কিশোর বয়সে মোটেও মানায় না। কিন্তু উজ্জ্বল সব রঙের ব্যবহারে চোখ আর নখ সাজাতে নেই মানা; বরং তা যেন এক মজার খেলা।

চোখ সাজানোটাই তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। আরও একটা প্রিয় কাজ নখ সাজানো।  কিশোরী বয়সটাতে সাজতে গিয়ে মায়ের বকুনি খাননি, এমন কেউ খুব কমই আছেন। কোমল-কচি ত্বকখানি সাজের কারণে নষ্ট হয়ে যাবে কিংবা এতে ব্রণের সমস্যা হতে পারে ভেবে থাকেন অনেকেই। বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়। সাজগোজের পর চাই একটু বাড়তি যত্ন। মেকআপের আগে অবশ্যই ত্বককে প্রয়োজনমতো ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে। তারপর শুরু করুন সাজের পালা। কিশোরীদের ত্বক এমনিতেই সজীব দেখায়। তাই অতিরিক্ত ফাউন্ডেশন বেজ হিসেবে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং হালকা পাউডারই যথেষ্ট। ইচ্ছেমতো রং মাখিয়ে নিন চোখে। চোখের মেকআপটাই ফুটিয়ে তুলবে আপনার উচ্ছলতা আর সব না-বলা কথা।

একেক উপলক্ষে চোখ সাজিয়ে তুলুন একেক রূপে। হিম হিম শীতে চোখের সাজেও রাখতে পারেন হিম আবেশ। নীল আইশ্যাডো চোখের পাতাজুড়ে লাগিয়ে তার সঙ্গে গাঢ় নীল-লাইনার টেনে নিন পাপড়ি ঘেঁষে। রুপালি, হালকা নীলে করে নিন ভুরুর নিচের হিম আবেশ। চোখের নিচে গাঢ় নীল কাজল টেনে নিয়ে পাপড়িগুলোয় মাসকারা দিন আলতো করে। শীতফ্যাশনের হুডি টি-শার্ট, সোয়েটারের সঙ্গে বেশ দেখাবে আপনাকে। চোখের সাজের সঙ্গে মিল রেখে হাতের নখগুলোও সাজিয়ে তুলুন নীলে। প্রথমে নখে হালকা নীল রঙের নেইলপলিশের বেজ নিন। তার ওপর গাঢ় নীল ও সাদা পাথর জুড়ে দিন। চাইলে চোখেও জুড়ে দিতে পারেন দু-একটা পাথর।
গোলাপি রঙের সাজেওচোখ সাজিয়ে তুলতে পারেন। গোলাপি রঙের গাঢ়, হালকা—দুটি শেডই বেছে নিন। এর সঙ্গে বেগুনি শ্যাডো যোগ করে নীল-লাইনার টেনে নিতে পারেন চোখে। নখে লাগিয়ে নিন বেগুনি রঙের নকশাদার স্ট্যাম্প। গোলাপি যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যাবে এ সাজ।
গোলাপি রঙের মতো এ বয়সে লাল রঙের পোশাকের প্রতিও সবার ঝোঁক থাকে। লাল পোশাকে চোখ সাজিয়ে তুলুন বাদামি, কালচে ধোঁয়াশা করে। আর নখে ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর করে লাল নেইলপলিশ ও পাথরের ব্যবহার করতে পারেন। রাতের যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য একেবারে যথাযথ হবে এ সাজ।
ছুটির দিনে বন্ধুদের সঙ্গে টইটই করে ঘুরতে যাওয়া হবে? এবার তবে পুরো রংধনুটাই তুলে নিন চোখে। গোলাপি, হলুদ, সবুজ থেকে একটু একটু নিয়ে লাগিয়ে নিন। তার সঙ্গে খুলে দিন চুল। সাদা রঙের পোশাকে চমৎকার মানিয়ে যাবে এ সাজ।
সুন্দর সাজের ক্ষেত্রে সঠিক সাজের উপাদানের ভূমিকাও কম নয়।
আই-লাইনারটা হতে হবে জেল আই-লাইনার। এতে ছড়িয়ে যাওয়ার ভয় বা আশঙ্কা থাকবে না। ঠোঁটের জন্য হালকা রঙের লিপগ্লসই যথেষ্ট। তবে লিপগ্লস ব্যবহারের আগে ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে নিতে হবে। আইশ্যাডো হিসেবে নিয়ন রঙের এসিড প্যালেট কিংবা আলাদা আইশ্যাডো বক্স ও আইপেনও বেছে নিতে পারেন। নখের নকশা করার জন্য স্ট্যাম্প কিনে নিতে পারেন, আবার নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেও নিতে পারেন। নখ ছোট হলে আলাদা নকশা করা নখও বেছে নিতে পারেন। যাঁরা চোখের পাপড়ি ব্যবহার করতে চান, তাঁরা অবশ্যই আপনার চোখের পাপড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেটিকে আকৃতি দিয়ে নিতে ভুল করবেন না। সাজ বাক্সে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের সর্বদা উপস্থিতি থাকে, সেটি হলো মেকআপ রিমুভার। সুন্দর হওয়ার জন্য সেজে ওঠাটা যেমন জরুরি, সুন্দর থাকার জন্য সঠিকভাবে সাজ উপাদান তুলে ত্বককে বিশ্রাম দেওয়াও জরুরি। সব প্রস্তুতি যদি ঠিক থাকে, তবে দেরি কেন? সাহস করে আজই মেতে উঠুন সাজের রঙিন খেলার উৎসবে।

ঘুমের আগে ত্বকের যত্নে

শীত চলে এলে ত্বকের যে বিশেষ যত্ন দরকার তা আমাদের সবারই জানা। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না কখন নেবেন ত্বকের যত্ন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বা দুপুরে গোসলের পর তো বটেই, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও ত্বকের দরকার বিশেষ পরিচর্যা। 

 ঘর থেকে আমাদের তো বাইরে যেতেই হয়। আর শীতে যেহেতু ধুলাবালি বেড়ে যায়, তাই সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ত্বকের দরকার একটু বিশেষ যত্ন।
শীতের রাত দীর্ঘ সময়ের; তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ বা কোমল সাবান দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর যাঁদের ত্বক কিছুটা শুষ্ক, তাঁরা তৈলাক্ত ক্রিম লাগাতে পারেন। আর যাঁদের ত্বক এমনিতেই তৈলাক্ত তাঁরা ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম দিতে পারেন। সংবেদনশীল ত্বক যাঁদের, অর্থাৎ ত্বকে ক্রিম দিলে র‌্যাশ ওঠার মতো সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্য শিশুদের উপযোগী ক্রিম.
শীতের শুরুতেই শুষ্কতার আবেশ টের পায় নাজুক ঠোঁট। ঠোঁট ফাটা বা চামড়া ওঠার সমস্যা তো আছেই। তাই রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ঠোঁটে ভ্যাসলিন বা চ্যাপস্টিক দিতে পারেন। তবে যাঁদের ঠোঁটের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁরা ঠোঁটের ত্বকের ধরন বুঝে লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হাত, পা শাওয়ার জেল কিংবা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলতে হবে। পায়ের গোড়ালির মৃত কোষ তুলতে কিছুক্ষণ পা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঝামা দিয়ে ঘষতে হবে। কেননা, সারা দিনের চাপ তো পায়ের ওপর বেশি পড়ে। হাত-পা পরিষ্কারের পর ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগাতে হবে।
যাঁদের পা ফাটা সমস্যা আছে, তাঁরা ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটু পুরু করে পায়ে ভ্যাসলিন লাগিয়ে সুতির মোজা পরতে পারেন। এতে পা নরম থাকে এবং পা ফাটা প্রতিরোধে বেশ কাজ দেয়। অনেকের আঙুলের ওপরের অংশ ফাটে, এ ক্ষেত্রে আঙুলের কোনার জায়গা পরিষ্কার করে ভ্যাসলিন লাগাতে হবে। সম্ভব হলে সারা শরীর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগিয়ে নিতে পারেন।
আর যাঁদের হাত ঘামে তাঁরা হাতে লোশন লাগিয়ে হালকা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন। তাতে হাত কম ঘামবে এবং লোশনের নরম ভাবটা ত্বকে থেকেই যাবে। শীতের সময় সিনথেটিকজাতীয় কাপড় পরে ঘুমোলে শরীর গরম হয় না, তাই মোটা সুতির কাপড় পরে ঘুমোতে যাওয়া উচিত। সুতির ফুল হাতার গাউন বা ম্যাক্সি পরলে হাত-পায়ের ত্বক সুরক্ষিত থাকবে।

উঁচু হিলে বিপত্তি (High Heel Shoe)

উঁচু হিলের জুতা। উচ্চতা বাড়াল, হাঁটার ধরন হয়ে উঠল আকর্ষণীয়। পা দুখানাও দেখাচ্ছে চমৎকার। কিন্তু হিল খোলার পরে? পায়ের ব্যথায় হয়তো দুদিন হাঁটতেই পারলেন না। তাই বলে বিশেষ অনুষ্ঠানে হিল না পরেও তো কোনো উপায় নেই। তাই হিল পরা কীভাবে নিরাপদ করবেন, তা নিয়েই এই আয়োজন।  চলনে ও ব্যক্তিত্ব আলাদা সৌন্দর্য যোগ করে পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করা হিল। তিন ধরনের হিল দেখা যায়। চোখা গোড়ার হিল, পেনসিল হিল এবং সামনে-পেছনে সমান উঁচু ফ্ল্যাট হিল। আজকাল প্রায় সব তরুণী যেকোনো পোশাকের সঙ্গে হিল পরছেন।

চাই মানানসই হিল
হিল জুতা অবশ্যই ড্রেসকোডের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে হবে। সালোয়ার-কামিজের চেয়ে শাড়ি, ফতুয়া, জিনস কিংবা চাপা সালোয়ারের খাটো কামিজের সঙ্গে হিল বেশ মানানসই। পোশাকের রংও এ ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পুরোপুরি সাদা পোশাকের সঙ্গে শুধু লাল জুতা মানায় না। সে ক্ষেত্রে পোশাকের অন্যান্য অনুষঙ্গ যেমন—ব্যাগ, ঘড়ি, চুড়ি অথবা রোদচশমা জুতার সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন।
হিলে ফুটে ওঠা চাই আপনার রুচি এবং ব্যক্তিত্বের মিশেল। অনেকেই ফিতাওয়ালা কিংবা অতিরিক্ত কারুকাজ করা রং-বেরঙের হিল পছন্দ করেন। পশ্চিমা ধাঁচের সঙ্গে ও ধরনের হিল মানায়ও ভালো। আবার একরঙা জুতাও ভালো লাগে।

হিল পরার প্রস্তুতি
হিল পরার মূল উদ্দেশ্যই হলো পা সুন্দর দেখানো।  সে ক্ষেত্রে পায়ের যত্ন নিতে হবে সবার আগে। পায়ের ত্বকের রং যেমনই হোক, পা পরিষ্কার থাকা চাই। নখের ভাঁজে ধুলা-ময়লা থাকা যাবে না। নখে নেইলপলিশ লাগাতে পারেন। অথবা শুধু বাফারিং বা শাইনিং লুক নিয়ে আসতে পারেন সাদা নখে। পায়ের জুয়েলারি যেমন নূপুর, রিং বা অ্যাঙ্কলেট হিলের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে যাবে। সবচেয়ে জরুরি হলো, গোড়ালি সুন্দর রাখা। অবশ্যই গোড়ালিতে কোনো ফাটা বা রুক্ষভাব থাকা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পেডিকিউর করাতে পারেন। হিল জুতা একটু দামি হওয়াই ভালো। কারণ, ফ্যাশনগুরুরা সব সময় বলেন, আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচি দুটোই বোঝা যায় পায়ের জুতা দেখে।

উঁচু হিলের সমস্যা
মানবশরীরে পায়ের গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয়। পা পুরো শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে। সেই ভারসাম্য খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায় উঁচু হিলের কারণে। নিয়মিত উঁচু হিল পরলে মেরুদণ্ডের হাড় সরে যায়। স্নায়ুচাপ তৈরি হয়। শরীরের কিছু অংশ পুরোপুরি অচল ও অবশ হয়ে যায়। গোড়ালির মূল রগ ছোট হয়ে যায়।
উঁচু হিলের কারণে গোড়ালিতে চাপ পড়ে। এ কারণে ঘাড় ও পিঠে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। গোড়ালির স্নায়ু ও ত্বক হলদেটে হয়ে শক্ত হয়ে পড়ে। আঙুলের নিচের কোমল অংশে ক্ষত তৈরি হয়। সব সময় হাই হিল পরার অভ্যাস হাঁটুতে বাত ও বার্ধক্যজনিত নানা উপসর্গ ত্বরান্বিত করে। এ অভ্যাস আপনার পায়ের আঙুল চিরস্থায়ীভাবে সংকুচিত ও বিকৃত করে দিতে পারে।

 কিছু পরামর্শ—

 হাই হিল যেন আরামদায়ক হয়। না বেশি চাপা, না বেশি ঢিলা। তাই মোটা উলের মোজা পরা পায়ের মাপে হিল জুতা কিনুন। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের উঁচু হিল না পরাই ভালো।
 উঁচু হিল পা ও পুরো শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত করে। তাই অতিরিক্ত সেদ্ধ খাবার খাওয়া বাদ দিন।
 সঠিকভাবে হাঁটার অভ্যাস করুন। ব্যায়াম করুন।
 প্রতিদিন যোগব্যায়াম করলে উঁচু হিলজনিত সমস্যার অনেকখানি উপশম হয়।
 উঁচু হিল পরে উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটবেন না।
 গর্ভাবস্থায় ও মাসিকের সময় কখনোই উঁচু হিল পরবেন না।
 উঁচু হিলের সঙ্গে ত্বকের রঙের মোজা পরলে পায়ে দাগ কম পড়বে। ত্বকও ভালো থাকবে।
 নতুন নতুন হিল জুতা পরলে হাঁটার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। ধীরে হাঁটুন।
 গোড়ালি মচকে গেলে বা পায়ে বেশি ব্যথা করলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শীতের প্রসাধনী

ষড়্ঋতুর এ দেশে ঋতুর পালাবদলে শীতের আগমনটা চোখে আঁচ করতে পারুন আর না-ই পারুন, আপনার টানটান ত্বক নিশ্চয়ই তা অনুভব করতে পেরেছে!
প্রকৃতির এ রুক্ষতায় ত্বক আর চুল নিয়ে কাবু হওয়ার কিছু নেই। আবহাওয়া-উপযোগী প্রসাধনী নির্বাচন আর একটু বাড়তি পরিচর্যাই হতে পারে এর সহজ সমাধান।
‘ধুলা আর আর্দ্রতাহীনতা তো আছেই। পাশাপাশি শীতের মিঠে রোদটাও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে আমাদের ত্বকে ও চুলে। তাই এ সময়ের প্রসাধনী বাছাই করতে হবে এই দিকগুলো মাথায় রেখে।’ এভাবেই বলেন, ম্যাজিক মিরর মেকওভার লাউঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা হালিম হাই। তাঁর পরামর্শ হলো, শীতে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে তেলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।
সাধারণত আমরা বছরের অন্যান্য সময়ে পানিযুক্ত যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করি, তা শীতে কাজ দেয় না। যাঁদের ত্বক বেশি শুষ্ক তাঁরা পেট্রোলিয়াম জেলিও ব্যবহার করতে পারেন। যাঁরা মুখমণ্ডলে ক্রিম ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্রিম নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যাঁদের ঘরের বাইরে বেরোতে হয়, তাঁরা অবশ্যই সানস্কিন ব্যবহার করুন। আপনি কত সময় ঘরের বাইরে অবস্থান করবেন তার ওপর নির্ভর করে আপনার সানস্কিন বেছে নিন। বাংলাদেশে সাধারণত এসপিএফ-১৫ থেকে এসপিএফ-৪৫ পর্যন্ত সানস্কিন পাওয়া যায়। যাঁরা কেবল ঘণ্টাখানেক সময়ের জন্য বাইরে বেরোবেন, তাঁদের জন্য এসপিএফ-১৫-ই যথেষ্ট। যাঁরা সারা দিনের জন্য বের হবেন, তাঁরা অবশ্যই এসপিএফ-৪৫ সমৃদ্ধ সানস্কিন বেছে নিন। ঠোঁটের হাসিতে সজীবতা ধরে রাখতে ব্যবহার করুন লিপবাম। বাইরে বের হওয়ার আগে এসপিএফ-১৫ সমৃদ্ধ লিপবাম বেছে নিন। শীতে চুলও বিবর্ণ হয়ে পড়ে। অনেকেই খুশকির সমস্যায়ও ভুগে থাকেন। তাঁরা অবশ্যই অ্যান্টি ড্যানড্রাফ (খুশকি প্রতিরোধক) শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। রোদের প্রখরতা থেকে চুলকে খানিকটা বাঁচাতে পারেন সান প্রটেকশন (সূর্যরশ্মি প্রতিরোধক) জেল বা ক্রিম ব্যবহার করে। তবে রঙিন স্কার্ফখানি তার চেয়ে বেশি কাজ দেবে আপনাকে, বেশ ফ্যাশনেবলও দেখাবে। আমাদের দেশে শীতে যেন উত্সবের ধুম লেগে যায়। সে উত্সবের রঙে সেজে উঠতে বাধা নেই। তবে সজীব আর সতেজ সাজের প্রসাধনও হতে হবে আবহাওয়া উপযোগী। শীতের মেকআপের বেইজ হিসেবে বেছে নিন তেলযুক্ত তরল মেকআপ। এ সময় পাউডারযুক্ত প্রসাধন কম ব্যবহার করাই ভালো। তবে যাঁদের ত্বক অধিকমাত্রায় তৈলাক্ত, তাঁরা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে তার ওপর পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তরল আইশ্যাডো বেছে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, অনেকেরই চোখের পাপড়ি রুক্ষ হয়ে ওঠে শীতে। কখনো কখনো হালকা খুশকির প্রাদুর্ভাবও দেখা যায়। তাই পাউডার বা শক্ত স্টিকের আইশ্যাডো ব্যবহার না করাই ভালো। এ সময় বেছে নিন ক্রিমি ব্লাশন। বাজারে লিপস্টিকের মতো একধরনের ব্লাশন খুঁজে পাবেন, এটি লাগিয়ে হাত দিয়ে একটু আলতো ঘষে নিলেই হয়। ঠোঁট সাজাতে ম্যাট লিপস্টিকের চেয়ে লিপগ্লসটাই বেশি উপযোগী। শীতে তো আর ঘেমে কাজল লেপ্টে যাওয়ার ভয় নেই, তাই আপনার পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীল, বেগুনি, সবুজ—যেকোনো কাজলে রাঙিয়ে তুলতে পারেন চোখ।
প্রসাধন ব্যবহারের পর প্রসাধন সঠিকভাবে তুলে ফেলাও জরুরি। বাজার থেকে প্রসাধন তুলে ফেলার সহজ উপকরণ হিসেবে রিমুভিং লোশন কিনে নিতে পারেন। যাঁদের সারা দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে প্রতিদিন ঘরের বাইরে বেরোতে হয়, তাঁরা ব্যাগের কোণে একটি ছোট প্রসাধন ব্যাগ সার্বক্ষণিক সঙ্গী করে নিতে পারেন। একটা লিপগ্লস, সানস্ক্রিন লোশন, লিকুইড ফাউন্ডেশন আর একটা ফেসওয়াশ, একটু রঙিন কাজল—এই তো আপনার ভ্রাম্যমাণ ছোট্ট প্রসাধন ঘর।
তবে একটি কথা ভুলে যাবেন না। প্রসাধন যেমন আপনাকে সজীব, সতেজ করে সাজিয়ে তুলতে পারে, তেমনি ভুল প্রসাধন নির্বাচন এবং এর অতিরিক্ত প্রয়োগ আপনার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে কেড়েও নিতে পারে। তাই প্রসাধন কেনার সময় অবশ্যই ভালোমানের পণ্য বেছে নিন এবং ব্যবহারের আগে এর ব্যবহার-নির্দেশিকা ও ব্যবহারের সময়সীমা দেখে নিন। প্রসাধন সরাসরি মুখমণ্ডলে ব্যবহার না করে প্রথমে হাতের অল্প একটু অংশে ব্যবহার করে দেখুন, সেটি আপনার ত্বকে সহায়ক কি না। এরপর তা ত্বকে ব্যবহার করুন।
প্রসাধনের পাশাপশি প্রাকৃতিক উপাদানেও এ সময় নিজের ত্বক ও চুলের যত্ন নিতে পারেন। এ ধরনের পরিচর্যার নানা উপায় বলে দিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
 আমলকীর রস ও এক চামচ তিলের তেল একসঙ্গে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে ও চুলে লাগাতে পারেন প্রতিদিন একবার। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, তাঁরা তিলের তেল বাদ দিন।
 যাঁদের চুল পড়েছে তাঁরা টকদই, ডিম ও আমলকীর রস চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
 চোখের নিচের কালো দাগ ও পাপড়ির খুশকির জন্য পাকা টমেটোর রস ও মধু একত্রে মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
 নারকেল বা জলপাই তেল, গ্লিসারিন, গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
 যাঁদের হাত-পা ফাটে, তাঁরা তিলের তেল, গ্লিসারিন ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন একবার ম্যাসাজ করুন।

ধরন বুঝে ত্বকের যত্ন

ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহারই সর্বোত্তম, যদি তা করা হয় ত্বকের ধরন বুঝে।

আপনার ত্বকের ধরন কেমন
ত্বকের প্রাকৃতিক যত্নের প্রথম ধাপ ত্বকের ধরন বোঝা। ত্বক পাঁচ ধরনের। শুষ্ক, তৈলাক্ত, স্বাভাবিক, মিশ্র ও স্পর্শকাতর (সেনসেটিভ)। পাতলা টিস্যুর সাহায্যে সহজেই ত্বকের ধরন বুঝতে পারেন। সকালে ঘুম ভাঙার পর মুখ ধোয়ার আগে কপাল, নাকের ভাঁজ, চিবুক, গালে আলতো করে টিস্যুর চাপ দিন। ত্বক তৈলাক্ত হলে মুখের প্রতিটি অংশ থেকেই টিস্যুতে তেলের ছোপ পড়বে। এ ধরনের ত্বকে প্রায়ই ব্রণ হতে দেখা যায়। যদি কপাল, নাকের ভাঁজ, চিবুকে তেল পান, বুঝবেন আপনার ত্বক স্বাভাবিক। শুধু নাকে ও চিবুকে তেল থাকলে ত্বকের ধরন হবে মিশ্র। শুষ্ক ত্বকে তেল তো থাকেই না, বরং খরখরে হয়ে যায়; ফেটে লাল দেখায়। স্পর্শকাতর ত্বক খুব পাতলা হয়, অতিরিক্ত ফরসা হয়, ক্ষেত্র বিশেষে নীল শিরা দেখা যায়। এ ত্বকের জন্য সব ঋতুতেই চাই অতিরিক্ত যত্ন।

প্রাকৃতিক পরিষ্কারক
প্রতিদিনের শেষে এবং ফেসপ্যাক ব্যবহারের আগে মুখ পরিষ্কার (ক্লেনজিং) করা চাই। রাহিমা সুলতানার পরামর্শ হলো, তৈলাক্ত ত্বকের পরিষ্কারক হবে শসার রস, স্বাভাবিক ও মিশ্র ত্বকের জন্য গাজরের রসে দু-এক ফোঁটা লেবুর রস, শুষ্ক ত্বকে দুধ ও মধুর মিশ্রণ, আর স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য দুধ, মধু ও শসার রসের মিশ্রণ। এ তরল মিশ্রণগুলো কাচের পাত্রে করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে। তুলার সাহায্যে মুখে লাগাতে হবে। শুকিয়ে এলে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে।

প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক
রাহিমা সুলতানা বলেন, সপ্তাহে অন্তত এক দিন ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক ব্যবহার করা উচিত। আর ফেসপ্যাকটি অবশ্যই হবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী। তৈলাক্ত ত্বকের ফেসপ্যাকের জন্য নেবেন মুলতানি মাটি অথবা মটর ডালের বেসন এক টেবিল চামচ, শসার রস এক টেবিল চামচ, মধু আধা চা-চামচ, লেবুর রস আধা চা-চামচ। শুষ্ক ত্বকের মিশ্রণটি হবে আধা চা-চামচ মধু, একটি ডিমের হলুদ কুসুম, হালকা চন্দন গুঁড়া এবং আধা চা-চামচ অলিভ অয়েলের। ডিমে অ্যালার্জি থাকলে শুষ্ক ত্বকের আরেকটি মিশ্রণ হবে দুই টেবিল চামচ বাঁধাকপির রস, এক চা-চামচ মধু ও এক চা-চামচ ডালের বেসনের। যাঁদের ত্বক স্বাভাবিক, তাঁরা আধা চা-চামচ দুধের সর, আধা চা-চামচ মধু, এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রস, এক টেবিল চামচ ময়দার ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে মুখে আলাদা চমক আসবে। যাঁদের ত্বক মিশ্র, তাঁদের মিশ্রণটি হবে মসুর ডালের বেসন দুই চা-চামচ, গাজর পেস্ট এক টেবিল চামচ এবং আধা চা-চামচ মধুর। স্পর্শকাতর ত্বকের মিশ্রণে থাকবে এক টেবিল চামচ সয়া পাউডার, আধা চা-চামচ কাঠবাদামের পেস্ট, আধা চা-চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ দুধ। ফেসপ্যাকের মাস্ক অন্তত আধা ঘণ্টা মুখে মাখিয়ে রাখতে হবে। হালকা গরম পানিতে মুখ পরিষ্কার করে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।

সবশেষে
সুন্দর থাকতে সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম, পানি, শাকসবজির স্যুপ ত্বক ভালো রাখে ও ওজন কমায়। প্রতিদিনের খাবারে রংধনু ডায়েট অর্থাত্ হলুদ, সাদা, সবুজ, কমলা, বেগুনি ও লাল রঙের শাকসবজি ও ফলমূল আপনাকে সব সময় সুন্দর রাখবে। কারণ, সৌন্দর্য আসে ভেতর থেকে।

পরিষ্কার চুল, সুন্দর চুল

চুল সুন্দর, ঝলমলে ও মোলায়েম রাখতে সারা বছর চলে কতই না যত্ন-আত্তি। কিন্তু গোলটা বাধে শীতে এসে। রুক্ষ আবহাওয়ায় সেই চুলের সৌন্দর্য মাটি হওয়ার দশা। শুষ্কতার প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে চুল ভালো রাখতে শীতে তাই চাই আলাদা যত্ন।মাথার তালু আর চুলে ধুলাবালি লাগলে তা ঝরে না গিয়ে আটকে থাকে। ফলে চুল আঠালো ও চটচটে হয়ে পড়ে, খুশকিও দেখা দেয়। তাঁর মতে, শীতে চুলের সব সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার মূলমন্ত্র হলো নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা। এমনকি, গোসল প্রতিদিন করা সম্ভব না হলেও চুল ও মাথার তালু প্রতিদিনই আসলে শ্যাম্পু করে পরিষ্কার রাখা উচিত।
খুব সহজ ও মৌলিক কিছু উপায়ে শীতে চুল ভালো রাখা সম্ভব। চুল পরিষ্কার বিষয়ে আফরোজা জানান, তৈলাক্ত চুল হলে সপ্তাহে দুই দিন আর স্বাভাবিক ও শুষ্ক চুলে রোজই কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত শ্যাম্পুর পর। হট অয়েল ম্যাসাজ চুলের জন্য খুব উপকারী। চুল ও তালুতে কুসুম গরম তেল দিয়ে আধঘণ্টা পর ১০ মিনিট স্টিম নিয়ে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। হট অয়েল ম্যাসাজের ক্ষেত্রে তৈলাক্ত চুলের জন্য অলিভ অয়েল, শুষ্ক চুলে নারকেল তেল আর মিশ্র প্রকৃতির চুলে ও চুল পড়ার প্রকোপ থাকলে তিলের তেল নিন। পুরো রাঙানো বা হাইলাইটেড চুল হলে হেয়ার স্পা বা প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন প্রতি ১৫ দিনে অন্তত একবার। শুধু পরিষ্কারই নয়, চুলে ঔজ্জ্বল্য আনতে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত প্যাক ব্যবহার করুন। আপনার চুলের ধরন বুঝে ঘরে বসেই তৈরি করে নিতে পারেন চুলের প্যাক—
 তৈলাক্ত চুলের জন্য মধু, পাকা কলা, টক দইয়ের মিশ্রণ প্যাক হিসেবে ব্যবহার করুন। মধু তালুর যত্নে খুব ভালো। এ প্যাক চুলে বেশ একটা কোমল ভাব এনে দেবে।
 মিশ্র প্রকৃতির চুলের জন্য আমলা, বহেড়া, হরীতকী গুঁড়ার সঙ্গে টক দই মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।
 শুষ্ক চুল ও খুশকি থাকলে সরিষার খৈল, টক দইয়ের প্যাকে খুব উপকার পাবেন।
 চুলে জেল্লা আনতে পাকা পেঁপে, পাকা কলা, মধু, টক দইয়ের প্যাক লাগান। তৈলাক্ত চুলের ক্ষেত্রে প্যাকে পাকা পেঁপে এড়িয়ে চলুন।
ধোয়া না থাকলে চুলে স্টাইল দেওয়াও দুরূহ। কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার দিন নিতান্তই যদি চুল ধোয়া না থাকে, তবে ‘মুজ’ ব্যবহার করে চুলে একটা ‘ওয়েট লুক’ দিয়ে নিতে পারেন। মনে রাখতে হবে, প্রতি ১৫ দিনে অন্তত একবার তৈলাক্ত চুলে প্যাক ব্যবহার করুন। আর শুষ্ক ও মিশ্র চুলে ১০ থেকে ১৫ দিন অন্তর একবার প্যাক লাগান। পরিষ্কার চুলের সঙ্গে সঙ্গে এভাবেই সঠিক যত্নে সুন্দর চুলে পার করুন পুরো শীত।

বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

বাড়িতেই চুলের যত্ন

আজকাল স্যালনে গিয়ে চুলের যত্ন নেন অনেকে। প্রোটিন ট্রিটমেন্ট, হেয়ার স্পা ইত্যাদি নানা ধরনের যত্নের ব্যবস্থা আছে স্যালনে। তবে বাড়িতে বসেও চুলের এমন যত্ন নেওয়া সম্ভব।


‘সাধারণত যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের চুলও তৈলাক্ত হয়। আর যাদের ত্বক শুষ্ক, তাদের চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়। কেবল ঋতুভেদে নয়, চুলের প্রাকৃতিক যত্ন চাই প্রতিক্ষণ।’ বললেন রাহিমা সুলতানা। তাঁর দেওয়া চুলের প্রাকৃতিক যত্নের কিছু পরামর্শে চোখ বুলিয়ে নিন ঝটপট।

বুঝে নিন চুলের ধরন
চুলের যত্নের প্রথম ধাপ চুলের ধরন বোঝা। যাদের চুল তৈলাক্ত, তাদের চুলে প্রচুর খুশকি হয়। আর যাদের চুল শুষ্ক, তাদের চুল খুব দ্রুত রুক্ষ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, অনেকের প্রতিটি চুলই বেশ মোটা। তবে আসল হলো রুট বা চুলের গোড়ার ধরন বোঝা। চুলের গোড়া মজবুত না হলে চুলের সৌন্দর্যের প্রায় পুরোটাই মাটি। তাই চুলের যত্নের মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ার যত্ন নেওয়া। বললেন রাহিমা সুলতানা।

কিছু হারবাল প্যাক
চুলের যত্নে নামীদামি প্রসাধন নয়, প্রয়োজন মনোযোগ। আর প্রাকৃতিক প্যাক তৈরিতে হাতের কাছে পাওয়া উপাদানগুলোই যথেষ্ট। বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে পড়ে নিন প্যাকের বিবরণ—


চুল সুন্দর রাখতে প্রথমেই যত্ন নিন স্কাল্প বা মাথার ত্বকের। সপ্তাহে তিন দিন ছয় টেবিল-চামচ নারকেল তেল দিয়ে ২০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন শ্যাম্পু দিয়ে। কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন।


মাথায় খুশকির উপদ্রব? নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন লেবুর রস। এক ঘণ্টা মাথায় রেখে তারপর শ্যাম্পুু করুন।


একটি কাচের শিশিতে এক টেবিল-চামচ মধু ও চার টেবিল-চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা রেখে দিন। ব্যবহারের আগে আরেকবার ঝাঁকিয়ে নিন। চুলে পাঁচ-দশ মিনিট ম্যাসাজ করে আঁচড়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ পরে র‌্যাপ করে রাখুন ২০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করুন। দেখুন না, প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের জাদু!


ক্যাস্টর অয়েল নিন চার টেবিল চামচ। মাথার তালুতে আলতো হাতে মেখে রেখে দিন ২০ মিনিট। পাতলা চুল ঘন হবে, চুল পড়াও কমবে।


একটি ডিম, এক টেবিল-চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ঘষে ঘষে মাখান চুলে। শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে রেখে দিন আধা ঘণ্টার মতো। তারপর শ্যাম্পু করুন। এই প্যাক চুলে কন্ডিশনারের কাজ যেমন করবে, চুলকেও মজবুত করবে।

শ্যাম্পু করার পর ডিম একটি, এক কাপ টক দই, দুই টেবিল-চামচ ত্রিফলা (আমলকী, হরীতকী, বহেড়া) গুঁড়ার মিশ্রণ চুলে মেখে রেখে দিন মিনিট ত্রিশেক। এটি রং করা বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা চুলের প্রোটিন প্যাক হিসেবে কাজ করবে।


আমলকী পেস্ট দুই টেবিল-চামচ, ডিম একটি এবং টক দই আধা কাপ মেখে প্যাক তৈরি করতে পারেন। কন্ডিশনার ও প্রোটিন প্যাক দুটোরই উপকার পাবেন।

অনেকের মাথায় কিছু অংশের চুল পাতলা হয়ে মাথার ত্বক দেখা যায়। তাঁরা আমলকী বেটে পেস্ট করে তার রস লাগাবেন প্রতিদিন। দুই সপ্তাহ লাগানোর পর ফল পাবেন।

দুই টেবিল-চামচ আমলকীর সঙ্গে দুই টেবিল-চামচ তিলের তেল ও আধা কাপ টক দই মিশিয়ে নিন। এই প্যাক ব্যবহারে শুষ্ক চুলে আসবে ঝলমলে সতেজতা।

প্রতিদিন অন্তত একটি আমলকী খাওয়ার চেষ্টা করুন। চুল পড়া কমবে।

চুলে উকুন থাকা একটি সাধারণ সমস্যা। ঘর্মাক্ত ও ভেজা চুলে উকুন দ্রুত বংশ বিস্তার করে। সে ক্ষেত্রে উকুন ধ্বংস করার ওষুধ ব্যবহার করুন। নারকেল তেলের সঙ্গে প্রতিদিন লেবুর রস মেশালেও উকুন মরে যাবে।


ফ্যানের বাতাসে চুল শুকানো ভালো। হেয়ার ড্রায়ারের ঠান্ডা বাতাসেও শুকাতে পারেন।
এ ছাড়া মনে রাখুন, চিরুনি ও ব্রাশ সব সময় আলাদা ও পরিষ্কার রাখা চাই। চুলে অনেক বেশি রাসায়নিক, রং, ড্রায়ার বা আয়রন ব্যবহার না করাই ভালো।